আল্লাহ প্রেমিকের এক নামাজ তাহাজ্জুদ

আরবি চান্দ্র বছরের ১২টি মাসের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য রাত হলো শবে কদর । এ রাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাবান। আর এ রাতের বেলায়ই তো পবিত্র কোরআনুল কারিম অবতীর্ণ হয়েছে। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয় আমি এই কোরআনকে নাজিল করেছি সম্মানিত রজনীতে’ (৯৭:০১)।

এ জন্য নামাজ, জিকির, মোরাকাবা, মোশাহাদা তথা নফল ইবাদতে রাত জাগা এবং শেষ রাতে জাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা মহান আল্লাহপাকের কাছে খুবই পছন্দনীয়। সে জন্যই আল্লাহপ্রেমিকরা শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠে নীরব-নিস্তব্ধ পরিবেশে প্রেমাস্পদের সঙ্গে একান্ত প্রেমালাপে লিপ্ত হয়।

পবিত্র কোরআনে আরো বলা হয়েছে, ‘তারা রাত অতিবাহিত করে তাদের পতিপালকের সামনে সিজদাবনত ও দাঁড়ানো অবস্থায়’ (২৫:৬৪)। এ আয়াতে কারিমা থেকে অবগত হলাম যে তারা আরামের শয্যা ত্যাগ করে ঘুম ও তন্দ্রাকে উপেক্ষা করে সারা রাত আল্লাহর ইবাদতে কাটায়। সুতরাং বলা যায়, রাত দিনের চেয়ে অধিক দামি এবং মূল্যবান। এ মূল্যবান রাতের শেষাংশে জাগ্রত হওয়া নবী, রাসুল, ওলি, বুজুর্গ তথা আল্লাহর সব প্রিয় বান্দার কাজ।

রাসুলে পাক (সা.) এ তরিকা অবলম্বন করতে তাঁর উম্মতকে বলেছেন যে ‘নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়ো। কেননা, এটা তোমাদের পূর্ববর্তী সব পুণ্যবানের অভ্যাস ছিল। তাহাজ্জুদ আল্লাহপাকের নৈকট্যদানকারী, মন্দ কাজের কাফফারা এবং পাপ থেকে নিবৃত্তকারী’ (মাজহারি)।
শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠার উপকারিতা এবং সুফল লাভের ব্যাপারে ডক্টর আল্লামা ইকবাল বলেন, ‘প্রেম যখন প্রেমিকাকে শেষ রাতে জাগ্রত হওয়ার সদাচরণ শিক্ষা দেয়, তখন প্রেমাস্পদের ভেদ প্রেমিকের সামনে উন্মোচিত হয়। আমাদের জারিয়ার শায়খ ক্বারী সিদ্দীকুর রহমান (রহ.) অনেক সময় বলতেন, ‘তাহাজ্জুদ ছাড়া কেউ আল্লাহর ওলি হতে পারে না।’
নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা মহান আল্লাহর ইবাদতকারীদের বিশেষ একটি গুণও বটে। এ গুণে গুণান্বিত হতে জারিয়ার শায়খ (রহ.) তাঁর প্রিয় ভক্তদের নসিহত করতেন এ বলে যে ‘সব কাজে সুন্নতের অনুসরণ করবে। যে যত বেশি সুন্নতের অনুসরণ করবে সে তত বেশি আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ করবে। পাঁচ ওয়াক্তিয়া নামাজ জামায়াতের সঙ্গে আদায়ের পাশাপাশি তাহাজ্জুদ, ইশরাক, আওয়াবিন নিয়মিত পড়ার অভ্যাস করবে।’

পবিত্র কোরআনের সুরা ফোরকান ছাড়াও এ বিষয়ে সুরা বনী ইসরাইল এবং সুরা মুয্যাম্মিলে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। সুরা মুয্যাম্মিলের প্রথমাংশের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে সব মুসলমানের ওপরই তাহাজ্জুদের নামাজ একাধারে ১২ মাস পর্যন্ত ফরজ ছিল। কিন্তু একদিকে মিরাজের রাতে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ ফরজ করার কারণে এবং অন্যদিকে আটকে রাখা সুরা মুয্যাম্মিলের বাকি শেষাংশটি পূর্ণ এক বছর পর লওহে-মাহফুজ থেকে অবতীর্ণ হলে তাহাজ্জুদের নামাজ আর ফরজ থাকেনি, বরং তাতে ফরজ রহিতই করে দেওয়া হয়। তবে তাহাজ্জুদের এ নামাজ রাসুলে পাক (সা.) সাহাবি ও তাবেয়িরা পূর্ণ এক বছর পর্যন্ত ফরজ হিসেবেই আদায় করেছিলেন। এ সুরার সর্বশেষ আয়াতের ব্যাখ্যায়ও বলা হয়েছে যে তাহাজ্জুদের ফরজ নামাজ যা এখন নফল, মুস্তাহাব অথবা সুন্নতে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। তাতে যে যতটুকু কোরআন সহজে পাঠ করতে পারো, ততটুকু তিলাওয়াত করো।

তাহাজ্জুদের নামাজ রাত দুই-ততীয়াংশের সময় অথবা নূ্যনতম ফজর নামাজের আগে কমপক্ষে দুই রাকায়াত এবং সর্বোচ্চ ১২ রাকায়াত নামাজ পড়াকে তাহাজ্জুদের নামাজ বলে।
এ নামাজ প্রিয় নবীজি (সা.)-এর প্রিয় উম্মতের ওপর সুন্নত। নবীজি (সা.) এ নামাজের প্রতি রাকায়াতে কোরআন শরিফের আড়াই পারা এবং এর চেয়েও বেশি পড়তেন। তাহাজ্জুদের নামাজে কোনো নির্দিষ্ট সুরা পাঠের নিয়ম নেই।

নামাজ আদায়কারী হাফেজে কোরআন হলে তাঁকে যত বেশি সম্ভব কোরআন শরিফের অংশবিশেষ বেশি করে এ নামাজে পড়বে। তাহাজ্জুদের নামাজে দীর্ঘ সময় কোরআন পাঠের উপকারিতা সম্পর্কে অখণ্ড ভারতের নেতা ও আলেম আওলাদে রাসুল মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী (রহ.) বলেন, ‘আত্মশুদ্ধির ক্ষেত্রে শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজে কোরআন তিলাওয়াত অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে যখন আয়াতের মর্মার্থ উপলব্ধি করে দীর্ঘ সময় তিলাওয়াত করা যায়।’ আর যারা কোরআনের হাফেজ নন, তারা সাধ্যমতো সুরা কেরাত পাঠ করবেন।


 লেখক: মাওলানা এম এ রহমান