মুচি থেকে কোটিপতি

৮ বছরের এক শিশু রিচার্ড গেলফন্ড। মানুষের জুতা পলিশ করে তবেই তার প্রতিদিনের অন্ন জুটতো। ৮ বছর পরের ঘটনা। রিচের বয়স তখন ১৬ বছর। নিউ ইয়র্ক থেকে একটি সংবাদপত্র প্রকাশ করেন তিনি।

২৫ হাজার পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল রিচের প্রকাশনায় বের হওয়া পত্রিকাটি। একই সঙ্গে স্কুলে পড়াশোনায় চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি। পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি স্বপ্নবাজ এ নির্ভীক তরুণকে। একের পর এক ব্যবসায়িক সফলতা ধরা দিয়েছে তার কাছে। বিশ্বখ্যাত ত্রিমাত্রিক বা থ্রিডি চেইন আইম্যাক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নাম যারা জানেন, তাদের কাছে এর মধ্যেই সব পরিষ্কার হয়ে গেছে। তিনি আর কেউ নন। বরং তিনি ৮ বছরের সেই শিশুটিই যে একদিন মানুষের জুতার মলিনতাকে উজ্জ্বলতায় রূপ দিতো।

নিউ ইয়র্কে গেলফন্ডের প্রকাশনায় বের হওয়া সংবাদপত্রটির কল্যাণে ডাকসাইটে কিছু বিজ্ঞাপনদাতার নজর কাড়তে সক্ষম হন তিনি। তবে তার স্বপ্ন তাকে আরও বড় কিছু করার অনুপ্রেরণা জুগিয়ে চলে। নিউ ইয়র্কের স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৭৬ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ল থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি নেন রিচ। একটি আদালতে কেরানি পেশায় নিযুক্ত হন। আইন বিষয়ক একটি প্রতিষ্ঠানে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ফের ব্যবসা শুরু করেন রিচ। কারণ, রক্তে তার ব্যবসার নেশা।

একদিন বড় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। ড্রাই ক্লিনিং চেইন ব্যবসা শুরু করলেন ও সফলতাও পেলেন। কিন্তু সেখানে বেশি দিন নয়। ১৯৮৮ সালে আরেকটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে ব্র্যাডলি ওয়েচসলারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তারা অংশীদার হয়ে যান।

১৯৯৪ সালের ঘটনা। ব্র্যাডের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আইম্যাক্স কিনে নেন। চলচ্চিত্রে থ্রিডি প্রযুক্তির স্পর্শ দিয়ে তাকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলার প্রয়াস শুরু করে আইম্যাক্স। বলা যায়, প্রচলিত ধারার বিপরীতেই চলতে শুরু করেন তারা। বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা স্টিভেন স্পিলবার্গ, জর্জ লুকাসের সঙ্গে তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু সে সময় আশানুরূপ কোন সাড়া পাননি। চলচ্চিত্রকে ত্রিমাত্রিক রূপ দেয়ার কৌশল উদ্ভাবন করে আইম্যাক্স। জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে থ্রিডি প্রযুক্তিতে নির্মিত চলচ্চিত্র। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

রিচ নিজেই বললেন, ২০০০ সালের শুরুতে মুক্তিপ্রাপ্ত থ্রিডি চলচ্চিত্র ফ্যান্টাসিয়া ২০০০, ২০০৪ সালে থ্রিডি পোলার এক্সপ্রেস ও ২০০৯ সালে অ্যাভাটার পুরো ইতিহাস বদলে দেয়। আইম্যাক্স সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্যতা পায়। বিশেষ করে জেমস ক্যামেরনের অ্যাভাটার সারা বিশ্বে আলোড়ন ফেলে দেয়। ২৫০ মিলিয়ন ডলার আয় হয় অ্যাভাটার থেকে। অসামান্য ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জিত হয়। রিচ বলেন, ২০০৮ সালে আইম্যাক্সের ১৫০ থিয়েটার ছিল। আর এখন সে সংখ্যা ৭ শতাধিক। সামান্য এক মুচি থেকে নিজেকে অসামান্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আরও একটি ইতিহাস রচনা করলেন রিচ গেলফন্ড। আজ তার প্রতিদিনের যে আয়, হয়তো অনেকে বছরেও তা কল্পনা করতে পারেন না। নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অদম্য নেশায় তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন এমন এক স্থানে যেখানে হাতেগোনা কিছু মানুষের বিচরণ। মানবজমিন


তথ্য সুত্র: নিউজ ইভেন্ট ২৪ ডটকম