কন্যা সন্তান :: এক শ্রেষ্ট নেয়ামত

কন্যা সন্তান মহান আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে মাতা-পিতার জন্য একটি বিশেষ শ্রেষ্ট নেয়ামত। কন্যা সন্তানকে অশূভ মনে করা কাফিরদের বদস্বভাব। কন্যা সন্তানকে অপছন্দ করা খাটি মুমিনের পরিচায়ক নয়। কন্যা সন্তান অশুভ নয়, অকল্যানকর নয়। বরং কন্যা সন্তান জন্ম নেয়া খোশ কিসমতী ও সৌভাগ্যের নিদর্শন।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা একজন মহিলা তারা দুটো কন্যা সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে আমার নিকট এলো এবং তাদের জন্যে কিছু সাহায্য চাইলো। সে সময় একটি খেজুর ব্যতীত আমার ঘরে আর কিছুই পেলাম না। অতঃপর সেই খেজুরটিই আমি তাকে দিয়ে দিলাম। মহিলা খেজুরটিকে দুভাগ করে মেয়ে দুটোকে দিয়ে দিলো। নিজে তার একটুও খেলো না। এরপর সে উঠে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি তাকে উক্ত ঘটনা খুলে বললাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যে ব্যক্তি কন্যা সন্তান দ্বারা পরীক্ষায় নিক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করে। কিয়ামতের দিন তারা তার ও জাহান্নামের মাঝখানে দেয়াল হয়ে দাঁড়াবে।”
- বুখারী, মুসলিম


ব্যাখ্যা: অর্থাৎ আল্লাহ যাকে পুত্র সন্তান না দিয়ে শুধু কন্যা সন্তানই দিতে থাকেন এটাকেও আল্লাহর নিয়ামত বলে মনে করতে হবে। কেননা আল্লাহ দেখতে চান, পিতামাতা এ কন্যা সন্তানের সঙ্গে কিরূপ ব্যবহার করেন। এরা রোজগার করে তাকে খাওয়াবে না। তাদের সঙ্গে চিরকাল থাকবেও না। এ অবস্থায় এদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা হলে কিয়াতের দিন তারা পিতামাতার জন্যে দোযখ থেকে নাজাতের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।


রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন," যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান হবে, এবং সে তাদেরকে এলেম-কালাম, আদব-কায়দা শিক্ষা দিবে, এবং যত্নের সাথে প্রতিপালন করবে ও তাদের উপর অনুগ্রহ করবে, সে ব্যক্তির উপর অবশ্যই জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যদি কোন ব্যক্তির কন্যা সন্তান জন্মে এবং সে তাকে অন্ধকার যুগের রীতি অনুযায়ী জীবিত দাফন না করে, তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য না করে, কোন পুত্র সন্তানকে তার উপর বেশী গুরুত্ব ও মর্যাদা না দেয় তাহলে আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করবেন।
- আবু দাউদ

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন ইয়াতিমকে আশ্রয় দেয়, নিজের সঙ্গে খানাপিনায় শরীক করে। আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত সুনিশ্চিতভাবে ওয়াজিব করে দিয়েছেন। অবশ্য সে যদি এমন কোন পাপ না করে যা ক্ষমার অযোগ্য। যে ব্যক্তি তিনটি কন্যা সন্তান কিংবা অনুরূপ তিনটি বোনকে লালন-পালন করেছে, শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছে, স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত এদের সঙ্গে সদয় ব্যবহার করেছে, আল্লাহ তার জন্যেও জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছেন।” অতঃপর এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! দু’জনের সঙ্গে যদি এরূপ করা হয়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “দু’জন হলেও।” ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, লোকেরা যদি একজনের সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করতো তাহলে তিনি অবশ্যই বলতেন, “একজন হলেও।” আর যে ব্যক্তির নিকট থেকে আল্লাহ দুটি উত্তম জিনিস নিয়ে গেছেন তার জন্যেও জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো দুটো উত্তম জিনিস কি? তিনি বললেন, তার দু’টো চোখ।
- মিশকাত


ব্যাখ্যা: এ হাদীসে প্রকারান্তরে একটি কথা বলা হয়েছে, যদি কোন লোকের ছেলে না হয়ে শুধু মেয়েই হতে থাকে তাহলে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার না করে পরিপূর্ণ স্নেহ-মমতা দিয়ে লালন-পালন করা উচিত। তাদেরকে ধর্মীয় শিক্ষা প্রশিক্ষণ দানে সুশিক্ষিতা করে উপযুক্ত পাত্রে বিয়ে না দেয়া পর্যন্ত তাদের সঙ্গে স্নেহ ও মমত্বপূর্ণ ব্যবহার করতে হবে। যে ব্যক্তি তার কন্যা সন্তানদের সঙ্গে এরূপ ব্যবহার করবে আল্লাহর রাসূল তার জন্যে জান্নাতের সুখবর দিয়েছেন। অনুরূপভাবে কোন ভাই যদি তার ছোট ছোট বোনদের সাথে দুর্ব্যবহার না করে আদর-যত্ন সহকারে লালন-পালন করে, সুপাত্রে বিয়ে না দেয়া পর্যন্ত এদের সঙ্গে স্নেহপূর্ণ ব্যবহার করতে থাকে, তাহলে তার জন্যেও আল্লাহর রাসূল জান্নাতের সুসংবাদ দান করেছেন।

বিশ্ব নবী (স.) জাহেলী যুগের কলুষিত অধ্যয়ের অবসান ঘটিয়ে আরব জাতিকে সুসভ্য জাতিতে পরিণত করে ছিলেন। এক ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর কাছে তার জাহেলি যুগের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, "আমার একটি কন্যা ছিল। সে আমাকে খুব ভালবাসতো। তাকে নাম ধরে ডাকলে সে দৌঁড়ে কাছে আসতো। একদিন আমি তাকে ডাকলাম। তাকে সাথে নিয়ে হাঁটতে লাগলাম। পথে একটি কুয়া পেলাম। তার হাত ধরে ধাক্কা দিয়ে তাকে কুয়ার মধ্যে ফেলে দিলাম। তার যে শেষ কথাটি আমার কানে ভেসে এসেছিল তা হলো, 'হায় আব্বা, হায় আব্বা!' একথা শুনে রসূলুল্ল¬াহ (স.) কেঁদে ফেললেন। তার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো। উপস্থিত লোকদের মধ্যে একজন বললেন, ওহে তুমি রসূলুল্লা¬াহ (স.)-কে শোকার্ত করে দিয়েছ। রসূলুল্লাহ (স.) বললেন, তোমরা একে বাধা দিও না। যে বিষয়ে তার কঠিন অনুভূতি জেগেছে সে বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করতে দাও। তারপর তিনি বললেন, তোমার ঘটনাটি আবার বর্ণনা করো। সে ব্যক্তি আবার তা শুনালেন। ঘটনাটি আবার শুনে তিনি এত বেশি কাঁদতে থাকলেন যে, চোখের পানিতে তার দাড়ি মোবারক ভিজে গেল। এরপর তিনি বললেন, জাহেলি যুগে যা কিছু করা হয়েছে আল্ল¬াহ তা মাফ করে দিয়েছেন। এখন নতুন করে জীবন শুরু করো" (সুনানে দারামি)

উল্লেখিত আলোচনা দ্বারা প্রমানিত হয় যে, কন্যা সন্তান আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নেয়ামত। সুতারাং কন্যা সন্তানকে বেশী করে ভালবাসুন।আদর-সোহাগ করুন আর মায়া-মমতা দিয়ে লালন-পালন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর অসীম বানীর প্রতি লক্ষ্য রেখে কন্যা সন্তানকে আদর যত্ন করুন।